BNCC
Photo

এট এ গ্লান্স

জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও একতা এই তিন মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯২০ সালে ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করেন "ইউনিভার্সিটি কোর।" ১৯২৩ সালে ভারতীয় দেশরক্ষা বাহিনী আইন-১৯২৩ অনুসারে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "ইউনিভার্সিটি ট্রেণিং কোর বা ইউটিসি।" একই সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিসি চালু করা হয়। ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন ই. গ্রুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক ও ১০০ জন ছাত্রকে প্রথম সাহায্যকারী কোরের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯২৮ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে একে কোম্পানিতে উন্নীত করা হয়। এটি ইউটিসি'র ১২ টি ইউনিটের মধ্যে একটি ছিল। এর নাম দেয়া হয় "১২ ঢাকা কোম্পানি।"

১৯৪২ সালে একে একটি একক কোম্পানিতে উন্নীত করা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. মাহমুদ হাসানকে অবৈতনিক লে. কর্ণেল পদবী দিয়ে কোম্পানির ভার দেয়া হয়। ১৯৪৩ সালে এর নাম দেয়া হয় "ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেণিং কোর।" ১৯৪৬ সালে শিলং-এ এর প্রথম বার্ষিক অনুশীলন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৫০ সালে ৬২৫ ক্যাডেট এবং ৪০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে একে একটি ব্যাটালিয়নে উন্নীত করা হয়। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি ইউটিসি'র কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ছাত্রবিক্ষোভের পর ১৯৬৬ সালে পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু হয়। একই সালে এর নামকরণ করা হয় "পাকিস্তান ক্যাডেট কোর বা পিসিসি" এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রদের জন্য "জুনিয়র ক্যাডেট কোর বা জেসিসি" গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কর্পস (বিএনসিসি)

বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কর্পস (বিএনসিসি) এর দীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭১ সালে পিসিসি ও জেসিসি'র ক্যাডেটরা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ২২ জন ক্যাডেট শহীদ হন। স্বাধীনতার পর "পাকিস্তান ক্যাডেট কোর" নামটির স্থলে "বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর" নামটি প্রতিস্থাপিত হয়। ৩১ শে মার্চ, ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ক্যাডেট কোরের তিনটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৩ শে মার্চ, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি সরকারি আদেশ বিসিসি, জেসিসি কে সংগঠিত করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি প্রতিষ্ঠা করেন । যা 2016 সালে বিএনসিসি আইন নং 46 দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এই সংস্থার প্রধান কাজ হল বিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী, কর্তব্যবোধ, প্রতিশ্রুতি, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা এবং নৈতিক মূল্য বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে যাতে তারা ভাল / সুনাগরিক হয়।


 বিএনসিসি ক্যাডেট
বিএনসিসি আইন 2016 এর অধীনে তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের ক্যাডেট বলা হয়। ক্যাডেটগুলি মূলত যে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিএনসিসির কার্যক্রম বিদ্যমান তাদের ছাত্র। ক্যাডেটগুলি বিএনসিসির প্রধান কার্যক্ষম শক্তি, যারা সবাই প্রশিক্ষিত এবং জাতির জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত।

 বিএনসিসির মোটো
1. জ্ঞান ও শৃঙ্খলা
2. বিএনসিসির আত্মা
3. স্বেচ্ছাসেবীরা

 বিএনসিসির লক্ষ্য
1. শান্তি ও যুদ্ধের সময় সংগঠিত ও নিয়মানুবর্তিত স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে জাতির জন্য তাদের সেবা প্রদান করতে পারে এমন ভালো নাগরিক তৈরি করার জন্য স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান।

 বিএনসিসির ক্যাডেটদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
1. জাতীয় জরুরি সময়ে জাতির সেবা করার জন্য প্রস্তুত করা।
2. মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্ভোগী নাগরিকদের এবং জাতিকে সেবা প্রদান করা।
3. জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা হিসাবে কাজ করা। সরকার প্রদত্ত যে কোন দায়িত্ব গ্রহণ।
4. বিদ্যালয়ের সামগ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করা।

শাখাসমুহ
বিএনসিসির রয়েছে ৩টি শাখা। এগুলো হলোঃ

1. সেনা শাখা
2. নৌ শাখা
3. বিমান শাখা


 রেজিমেন্ট
সেনা শাখার অধিনে রয়েছে ৫ টি রেজিমেন্ট। এগুলো হলোঃ

1. রমনা রেজিমেন্ট[২]
2. ময়নামতি রেজিমেন্ট
3. কর্ণফূলি রেজিমেন্ট
4. মহাস্থান রেজিমেন্ট
5. সুন্দরবন রেজিমেন্ট
 ফ্লোটিলা
নৌ-শাখার অধিনে রয়েছে ৩টি ফ্লোটিলা; এগুলো হলোঃ

1. ঢাকা ফ্লোটিলা
2. চট্টগ্রাম ফ্লোটিলা
3. খুলনা ফ্লোটিলা

 স্কোয়াড্রন
বিমান শাখার অধিনে রয়েছে ৩টি স্কোয়াড্রন। এগুলো হলোঃ

1. ঢাকা স্কোয়াড্রন
2. চট্টগ্রাম স্কোয়াড্রন
3. যশোর স্কোয়াড্রন

 সুবিধাবলি

বিএনসিসির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীগণ সহজেই সামরিক বাহিনীগুলোতে যোগ দিতে পারেন। তারা সামরিক বাহিনীগুলোর মতো শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীগুলোতে যোগ দেওয়ার সময় তাদের লিখিত,মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়না এবং নির্বাচিত ক্যাডেটরা সরাসরি আইএসএসবি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

 প্রশিক্ষণ
1. ড্রিল
2. অস্ত্র প্রশিক্ষণ
3. মাঠ নৈপুণ্য এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ
4. ক্ষুদ্র ও রণকৌশল
5. সামরিক ইতিহাস
6. সামরিক বিজ্ঞান
7. রীতিবিরুদ্ধ যুদ্ধবিগ্রহ
8. ম্যাপ পড়া
9. প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন
10. কমান্ড এবং নেতৃত্ব

 পদবী
 ক্যাডেট পদবী
1. ক্যাডেট
2. ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল
3. ক্যাডেট কর্পোরাল
4. ক্যাডেট সার্জেন্ট
5. ক্যাডেট আন্ডার অফিসার[৩]
6. বিএনসিসিও পদবী

 পিইউও/টিইউও পদবী
1. ২/লেফটেন্যান্ট
2. লেফটেন্যান্ট
3. ক্যাপ্টেন
4. মেজর
5. লেফটেন্যান্ট কর্নেল

বিএনসিসি এট কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ

কর্ণফুলি রেজিমেন্টের ২নং ব্যাটালিয়ন (বর্তমানে ১২নং ব্যাটালিয়ন) এর অধীনে ১৯৬৬ সালে জেসিসি গঠিত হওয়ার পর অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি প্লাটুন চালু হয়। প্রতিষ্ঠার পর হতে ১ জন ক্যাডেট অফিসার পদে ও ৩ জন ক্যাডেট সৈনিক পদে যোগদান করেন। তাছাড়া ২ জন ক্যাডেট বিদেশ সফর করেন।
ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প ও রেজিমেন্ট ক্যাম্পে অংশ গ্রহনকালে আমাদের ক্যাডেটবৃন্ধ ৩ বার ডি কোম্পানী প্রধান ও CSM, CQMS, RP2IC সহ অন্যান্য পদে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে।

কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ (বিএনসিসি) এর সুযোগ্য ও স্বনামধন্য ক্যাডেটবৃন্ধ
১। জনাব মহিউদ্দীন চৌধুরী (সাবেক মেয়র)
২। জনাব আব্দুল্লাহ আল নোমান (সাবেক মন্ত্রী)
সহ অসংখ্য স্বনামধন্য ক্যাডেট অত্রপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছিল।